সাজেক ভ্যালি

বর্তমান সময়ের ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা হলো সাজেক। সুমদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত হওয়ায় সাজেক থেকে মেঘ স্পর্শ করা যায় মাঝে মাঝে। ভৌগোলিক কারণে দীঘিনালা থেকে সাজেকে যাতায়াত করতে হয়।

সাজেকে যাওয়ার জন্য জুলাই-নভেম্বর মাস খুবই ভালো সময়, কারণ এই সময় বেশী মেঘের খেলা দেখা যায়। সাজেকে গেলে আপনি দেখতে পারবেন সারি সারি পাহাড়, সাদা শুভ্র তুলার মতো মেঘ। এছাড়া, ক্ষনে ক্ষনে রূপ বদলায় সাজেকের প্রকৃতি, যা আপনাকে ভিন্ন রকম একটা অভিজ্ঞতা দিবে। সাজেকে ঘুরতে গেলে আপনি চাইলে ঘুরে দেখতে পারবেন কংলক পাহাড়, কংলক পাহাড়ের লুসাই উপজাতি এবং তাদের এলাকা, ২ ঘন্টা ট্রেকিং করে দেখতে পারবেন কোমলক ঝর্ণা।

সাজেক যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর থেকে জীপ গাড়ি/চান্দের গাড়ি ভাড়া নিয়ে সাজেক যেতে হবে। যদি গাড়ি ম্যানেজ না হয়, তাহলে সিএনজি দিয়ে সাজেক যেতে পারবেন।কিন্তু পাহাড়ি রাস্তায় সিএনজি ব্যবহার না করাই ভালো।

সেন্টমার্টিন

বাংলাদেশের মূল ভুখন্ড থেকে সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত সেন্টমার্টিন। ১৭ বর্গ কিলোমিটারের ক্ষুদ্র এই দ্বীপকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় নারিকেল জিঞ্জিরা। প্রাকৃতিক ভাবে এই দ্বীপটি খুবই সুন্দর। কারণ, চারপাশে সমুদ্র, নীল আকাশ এবং সারি সারি নারিকেল গাছ এই দ্বীপটিকে অপূর্ব সুন্দর করে তুলেছে। যারা নির্জন ভাবে সমুদ্র উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য সেন্টমার্টিন আদর্শ জায়গা। অনেকেই কক্সবাজার এবং সেন্টমার্টিন একসাথে ঘুরতে আসে। কারণ, এতে খরচ কিছুটা কম হয়। কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার, এছাড়া খুব সহজে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়।

সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য বেশির ভাগ জাহাজ টেকনাফ থেকে ছাড়া হয়। তাই আপনাকে সর্বপ্রথম টেকনাফ আসতে হবে সকাল ৯টার আগে। কারণ সকাল ৯টায় সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে জাহাজ ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে টেকনাফের বাস পাওয়া যায়। শ্যামলী, হানিফ, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ঈগল, এস. আলম পরিবহন, মডার্ণ লাইন, গ্রীন লাইন সরাসরি টেকনাফ যাওয়া যায়। এছাড়া, যারা কক্সবাজার ঘুরতে আসেন তারা কক্সবাজার থেকে এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস শীপ দিয়ে সেন্টমার্টিন পৌঁছাতে পারবেন।

সুন্দরবন

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বন হলো সুন্দরবন। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যৌথ ভাবে রয়েছে। কিন্তু বাংলদেশে রয়েছে ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার, যা ভারতের থেকে বেশি। খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা এবং পটুয়াখালী নিয়ে বাংলাদেশে সুন্দরবন অবস্থিত। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কোর কাছ থেকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

সুন্দরবন যদি ঠিকমতো ঘুরে দেখতে চান এবং এর গহীনে ঘুরতে যেতে চান তাহলে আপনাকে ৩-৪ দিন সময় নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে। কারণ সুন্দরবনের কিছু স্পট আছে যেইগুলো আপনাকে অবশ্যই ঘুরে দেখতে হবে। স্পটগুলোর নাম হলো-

  • করমজল।
  • হারবাড়িয়া।
  • কটকা।
  • কটকা বিচ।
  • জামতলা সৈকত।
  • মান্দারবাড়িয়া সৈকত।
  • হিরণ পয়েন্ট।
  • দুবলার চর।

আপনি ঠিক মতো যদি সুন্দরবন ঘুরে দেখতে চান, তাহলে আপনি কোন ট্রাভেল এজেন্ট অথবা ট্যুর অপারেটর এর মাধ্যমে যাবেন। কারণ, সুন্দরবন ঘুরে দেখার জন্য আপনাকে ফরেস্ট ফী দিয়ে নিরাপত্তা রক্ষী নিতে হবে এবং ট্রলার, লঞ্চ অথবা ছোট জাহাজ ছাড়া সুন্দরবন ঘুরে দেখা অনেক কষ্টকর।তাই আপনি কোনো ট্রাভেল এজেন্ট অথবা ট্যুর এজেন্টের মাধ্যমে ঘুরতে যাবেন সুন্দরবনে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট অখন্ড এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত হলো কক্সবাজার। এই জায়গায় সবসময় পর্যটকদের ভীড় থাকে, কারণ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান কক্সবাজার। কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকত দেখার পাশাপাশি আরো ঘুরে দেখতে পারবেন কিছু জায়গা। সেই জায়গার নাম গুলো হলো:

  • হিমছড়ি।
  • ইনানী সমুদ্র সৈকত।
  • মহেশখালী।
  • রামু বৌদ্ধ বিহার।
  • রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড।
  • সেন্টমার্টিন।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার আপনি ট্রেন, প্লেন, বাস এর মধ্যমে যেতে পারবেন। বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকে আপনি কক্সবাজার আসতে পারবেন। আর কিভাবে আসতে হয় তা সবারই জানা। যদি না জানেন তাহলে একটু গুগল এ সার্চ করেন, সব জানতে পারবেন কক্সবাজারের ব্যাপারে। 

এইখানে থাকার ব্যবস্থা এবং খাবার ব্যবস্থা ভালো আছে। কিন্তু শীতকালে কক্সবাজারে সবকিছুর মূল্য তুলনামূলক একটু বেশি থাকে।

পাথর ও প্রকৃতির মায়ায় ঘেরা ভোলাগঞ্জ

সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারির অঞ্চল। আপনার মনে হতে পারে এটি কোনো বাণিজ্যিক এলাকা , কিন্তু এই এলাকা প্রকৃতির সৌন্দর্যে ঘেরা। ভোলাগঞ্জের সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছে মেঘালয়ের উঁচু উঁচু পাহাড়। সেই পাহাড় থেকে নেমে আসা ধলাই নদীর ঝর্ণাধারা এবং সাদা পাথর ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুন। জুন থেকে ডিসেম্বর মাস, এই সময় ভোলাগঞ্জে গেলে সৌন্দর্য বেশি উপভোগ করতে পারবেন। এই এলাকায় গেলে দেখতে পারবেন কিভাবে পাথর উত্তোলন করা হয়। এছাড়া আছে উৎমাছড়া এবং তুরুংছড়ার মতো সুন্দর জায়গা।

যদি আপনি ভালগঞ্জে যেতে চান তাহলে আপনাকে প্রথমে সিলেট সদরে আসতে হবে। সেখান থেকে বিআরটিসি বা লোকাল বাসের মাধ্যমে অথবা সিএনজির মাধ্যমে আপনি ভোলাগঞ্জের জিরো পয়েন্টে যেতে পারবেন।

কাপ্তাই লেক

১৯৫৬ সালে আমেরিকার অর্থায়নে তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কাপ্তাই লেক তৈরী করে। কাপ্তাই লেক দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম লেক, যার আয়তন ১১০০০ কিলোমিটার। কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য বলে প্রকাশ করা যাবে না। আপনি এই লেকে ঘুরতে গেলে প্রকৃতি এবং সেখানকার মানুষের জীবন যাত্রা দেখতে পারবেন। এছাড়া, কাপ্তাই লেক ঘুরে দেখার জন্য সর্ব প্রকার ব্যবস্থা আছে।

ঢাকার সায়েদাবাদ কিংবা কমলাপুর থেকে বিভিন্ন কোম্পানীর বাস ছাড়ে কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে। এতে আপনার কাপ্তাই যেতে ৭-৮ ঘন্টা সময় লাগবে।

কুষ্টিয়ার লালন মেলা

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় অবস্থিত ফকির লালন শাহের মাজার। এই কুমারখালীতে লালন শাহ তার শিষ্যদের নীতি এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিতেন, এবং লালন শাহের মৃত্যুর পর তাকে এখানেই দাফন করা হয়। লালন শাহ প্ৰত্যেক শীতে তার শিষ্যদের নিয়ে একটি মহাউৎসব এর আয়োজন করতেন। সেখান গান এবং আলোচনা হতো। তার মৃত্যুর পর তার শিষ্যরা এই মহাউৎসব এর আয়োজন করেন। এখনো এই মহাউৎসব প্রত্যেক শীতে হয়ে থাকে। এই উৎসবে বাংলদেশের বেশিরভাগ সংস্কিতিমনা মানুষ যোগ দিয়ে থাকে।

ফকির লালন শাহের আখড়ায় যে মেলা হয় তাকে সাধারণত লালন মেলা বলা হয়। এই মেলা বছরে ২ বার হয়ে থাকে। একবার হয় দোল পূর্ণিমার সময় এবং আর একবার হয় কার্তিক মাসের ১ তারিখ।

লালন শাহের আখড়ায় যেতে চাইলে সর্ব-প্রথম আপনাকে কুষ্টিয়া সদরে আসতে হবে। সেখান থেকে রিক্সা বা সিএনজি নিয়ে আপনি লালন শাহের আখড়ায় যেতে পারবেন।

পটুয়াখালী জেলার দর্শনীয় এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমির নাম সমূহ

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি পটুয়াখালী জেলা। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এ জেলার ঐতিহ্য বহন করে। কুয়াকাটা থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য আদর্শ জায়গা।একমাত্র কুয়াকাটা এসেই সাগরের নানা রূপ বিভিন্ন ঋতুতে উপভোগ করা সম্ভব। পটুয়াখালী জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
  • ফাতরার চর।
  • বৌদ্ধ মন্দির।
  • কজালার চর। 
  • সোনার চর।
  • কানাই বলাই দিঘী। 
  • রাখাইন পল্লী।
  • হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফার মাজার। 
  • পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। 
  • পয়রা সমুদ্র বন্দর।
  • মজিদবাড়িয়া মসজিদ।
  • সীমা বৌদ্ধ বিহার।
  • পানি যাদুঘর।
  • কালাইয়া প্রাচীন বন্দর।
  • এশিয়ার বৃহত্তম বীজ বর্ধন খামার।

এই দর্শনীয় স্থান গুলোর ব্যাপারে আরো জানতে চাইলে ইউটুব অথবা গুগল এ সার্চ করে জানতে পারবেন।

সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত। কুয়াকাটাকে বলা হয় সাগর কন্যা, কারণ এখান থেকে সূর্য উদয় এবং সূর্য অস্ত দেখা যায়। এই বৈশিষ্ট কুয়াকাটাকে অন্যন করেছে।আরো দেখতে পারবেন কুয়াকাটার পরিছন্ন বেলাভূমি, অনিন্দ্য সুন্দর সমুদ্র সৈকত, দিগন্ত জোড়া সুনীল আকাশ এবং ম্যানগ্রোভ বন।কুয়াকাটা ঘুরে দেখার জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারেন।

নদী সড়ক পথে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। সদরঘাট থেকে পটুয়াখালী হয়ে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। কিন্তু আরাম ও সময়ের কথা চিন্তা করলে যদি নদী পথে যাওয়া ভালো। অথবা বরিশাল থেকে বাসে করে কুয়াকাটা যেতে পারবেন।

বরিশালের দর্শনীয় স্থান সমূহ

যারা নদী পথ ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য বরিশাল খুবই ভালো একটি জায়গা হতে পারে। কারণ, আপনি অনেক সময় ধরে নদী এবং এর আশেপাশের পরিবেশ দেখতে পারবেন। এছাড়া, বরিশালে কিছু দর্শনীয় স্থান আছে যেইগুলো আপনি চাইলে ঘুরে দেখতে পারবেন। নিম্নে দর্শনীয় স্থান সমূহের নাম দেওয়া হলো-

  • দুর্গাসাগর দিঘী।
  • শাপলা গ্রাম,সাতলা।
  • গুটিয়া মসজিদ।
  • শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর।
  • বঙ্গবন্ধু উদ্দ্যান বেলস পার্ক।
  • শংকর মঠ।
  • বিবির পুকুর।

এই ব্যাপারে আরো জানতে চাইলে আপনি ইউটুবে সার্চ করতে পারেন।