একদিনের জন্য ট্যুর প্ল্যান করে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায় ?

আমার মতে, একদিনের জন্য ট্যুর প্ল্যান করে যদি ঘুরতে যেতে চান তাহলে চাঁদপুর ঘুরতে যাওয়া উত্তম। ঘুরতে যাওয়ার জন্য আপনি লঞ্চে যেতে পারেন। কারণ, এতে আপনি নদীর বিশালতা ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেবন।

যদি আপনি চাঁদপুর ঘুরতে যেতে চান তাহলে আপনাকে সকাল ৯ টার মধ্যে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে উপস্থিত থাকতে হবে। কারণ, সকাল ৯ টা থেকে লঞ্চ চাঁদপুরের উদেশ্যে ছেড়ে যেতে থাকে। লঞ্চের মাধ্যমে আপনি চাঁদপুর গেলে দুপুর ১২-০১ টার মধ্যে চাঁদপুর পৌঁছে যাবেন।

চাঁদপুরে কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে যেগুলো আপনি অল্প সমেয়র মধ্যে ঘুরে দেখতে পারবেন। নিম্নে দর্শনীয় স্থানের নাম গুলো দেওয়া হলো:

  • রূপসা জমিদার বাড়ি
  • বড় ষ্টেশন
  • হযরত শাহরাস্তির মাজার
  • হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ
  • অঙ্গীকার
  • লোহাগড়া মঠ

এই জায়গা গুলো আপনি সন্ধ্যার মধ্যে ঘুরতে পারবেন। আপনি আপনার ইছামতো চাঁদপুর ঘুরে বিকাল বা সন্ধ্যায় এসে আবার লঞ্চে উঠে ঢাকায় চলে আস্তে পারবেন। চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে বিকাল ৫টা থেকে লঞ্চ ঢাকার উদেশ্যে ছাড়া শুরু করে। কিন্তু রাত ৮ টার আগে আপনাকে লঞ্চে উঠতে হবে, কারণ ওই সময় শেষ লঞ্চ ছেড়ে দেয়।

প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁও সমন্ধে আলোচনা এবং কিভাবে যেতে হয় ?

নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মোগড়াপাড়া ক্রসিং থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার উত্তরে সোনারগাঁও অবস্থিত। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে হিন্দু আমলে এই রাজধানী গড়ে উঠেছে বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে অনুপম স্থাপত্যশৈলীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য়ের নান্দনিক ও নৈসর্গিক পরিবেশে ঘেরা বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁও। সোনারগাঁও-এর আরেকটি নাম ছিল পানাম। পানাম নগরের উভয় পাশে মোট ৫২টি পুরোনো বাড়ী এই ক্ষুদ্র নগরীর মূল আকর্ষণ। এই ভবন গুলো ছোট লাল ইট দ্বারা তৈরী, তাছাড়া ভবন গুলো কোথাও বিচ্ছিন্ন, আবার কোথাও সন্নিহিত।

পানাম শহরের ঠাকুরবাড়ি ভবন ও ঈশা খাঁ’র তোরণকে একত্রে নিয়ে মোট প্রায় ১৬ হেক্টর জমির মধ্যে লোকশিল্প ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন গড়ে উঠেছে। এখানে একটি লোকজ মঞ্চ, একটি জাদুঘর, সেমিনার কক্ষ ও কারুশিল্প গ্রাম রয়েছে। প্রতি শুক্রবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্য়ন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।

আপনি যদি সোনারগাঁও যেতে চান, তাহলে আপনি গুলিস্তান অথবা যাত্রাবাড়ী থেকে বাস পাবেন। এই বাসের মাধ্যমে আপনি মোরগাপাড়া বাস স্ট্যান্ডে নামবেন সেখান থেকে আপনি সিএনজি অথবা রিক্সার মাধ্যমে পানাম নগর বা সোনারগাঁও যেতে পারবেন।

পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে আহসান মঞ্জিলের গুরুত্ব কেমন ?

আহসান মঞ্জিল ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে কুমারটুলি এলাকায় (সদরঘাট থেকে মাত্র ১০ মিনিটে হেটে যাওয়া যায়)। মুঘল আমলে আহসান মঞ্জিল জামালপুর পরগণার জমিদার শেখ এনায়েতউল্লাহ্’র রঙমহল হিসেবে পরিচিত ছিল। পরে তাঁর পুত্র মতিউল্লাহ্’র নিকট থেকে ফরাসিরা ক্রয় করে  বাণিজ্য কুঠিতে স্থাপন করে। ১৮৩০ সালে খাজা আলীমুল্লাহ্ ফরাসিদের নিকট থেকে কুঠিবাড়িটি কিনে নেন এবং নিজের আবাস স্থল হিসেবে গড়ে তুলে। এ বাসভবনকে কেন্দ্র করে খাজা আব্দুল গণি একটি ইউরোপীয় নির্মাণ ও প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানী নামক  দিয়ে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরী করান যার প্রধান ইমারত ছিল আহসান মঞ্জিল। বর্তমানে আমরা আহসান মঞ্জিলের যেই স্থাপত্য শিল্প দেখি, তার নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৮৫৯ সালে এবং ১৮৭২ সালে সমাপ্ত হয়।

ঢাকার প্রাণকেন্দ্র সদরঘাট থেকে মাত্র ১০ মিনিট লাগে আহসান মঞ্জিল যেতে।আপনি সদরঘাট এসে পায়ে হেটে অথবা রিকশা নিয়ে আহসান মঞ্জিল যেতে পারবেন

বর্তমানে প্রতিদিন ৮০০-৯০০ পর্যটক আসে আহসান মঞ্জিল এবং আহসান মঞ্জিলের ব্যবহার্য জিনিস-পত্র দেখতে।প্রতি বৃহস্পতিবার পর্যটকদের জন্য আহসান মঞ্জিল বন্ধ থাকে।

ভ্রমণের জন্য লালবাগ কেল্লা কেমন ?

মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস নিয়ে ঢাকার লালবাগে দাঁড়িয়ে আছে লালবাগ কেল্লা। ১৬৮০ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় কিন্তু ১৯৮৪ সালে কাজ অসম্পূর্ণ রেখে বন্ধ করা হয়। সময়ের সাক্ষী হয়ে প্রশস্ত এলাকা নিয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে লালবাগ কেল্লা। লালবাগ কেল্লা তে গেলে আপনি দেখতে পারবেন দরবার হল ও হাম্মাম খানা, পরীবিবির সমাধি এবং উত্তর পশ্চিমাংশের শাহী মসজিদ।

বর্তমানে রবিবার পূর্ণ দিবস এবং সোমবার অর্ধ দিবস বন্ধ থাকে। এছাড়া, সপ্তাহের বাকি দিন গুলি পযর্টকদের জন্য খোলা থাকে। লালবাগ কেল্লা ঢাকায় অবস্থিত, তাই আপনি চাইলে খুব সহজেই আস্তে পারবেন।

পিরোজপুরের বিখ্যাত জায়গা কোনটি এবং কিভাবে যাওয়া যায় ?

বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর কুরিয়ানা বাজার বাংলাদেশে খুবই বিখ্যাত। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পেয়ারার ভাসমান বাজার,যা আটঘর কুরিয়ানা ইউনিয়নে অবস্থিত। স্বরূপকাঠি বাজারের পাশ থেকে বয়ে যাওয়া সন্ধ্যা নদী থেকে যে খালের উৎপত্তি, সেই খালকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ভাসমান বাজার। এই ভাসমান বাজার কুরিয়ানা খাল থেকে শুরু হয়ে আটঘর পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে এই ইউনিয়নে আরও কিছু ভাসমান বাজার রয়েছে যেমন ভদ্রংকা, জিন্দাকাঠি, আদাবাড়ি, আদমকাঠি, ব্রাহ্মণকাঠি, ধলহার ইত্যাদি। এই ভাসমান বাজারটি দেখার উপযুক্ত সময় জুন থেকে সেপ্টেম্বর।

তো চলুন ঘুরে আসি এই ভাসমান পেয়ারার বাজার।

এই ভাসমান পেয়ারা বাজারে যেতে হলে আপনাকে বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে বরিশাল সদরে আসতে হবে, এখান থেকে আপনি দুইভাবে আটঘর কুরিয়ানার এই ভাসমান পেয়ারা বাজারে আসতে পারবেন।

প্রথমত: নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস বা অটোরিকশায়, আপনাকে বানারীপাড়ার রায়ের হাট বাসস্টপে নামতে হবে। সেখান থেকে ইজিবাইক, রিকশা বা মোটরবাইকে করে ১৫ মিনিটে কুরিয়ানার এই ভাসমান বাজারে পৌঁছানো যায়।

দ্বিতীয়তঃ আপনি বরিশাল শহরের বটতলা মোড়ে আসবেন এবং সেখান থেকে লেগুনা/ছোট গাড়ি নিয়ে আটঘর কুরিয়ানার ভাসমান বাজারে যাবেন। ভাসমান পেয়ারার বাজার এসব আটঘর থেকে কুড়িয়ানা পর্যন্ত বিস্তৃত।

এছাড়াও, আপনি ঢাকা থেকে বাসে বা লঞ্চে সরাসরি স্বরূপকাঠি উপজেলায় আসতে পারেন, ঢাকার গাবতলী থেকে স্বরূপকাঠির জন্য সকাল ও রাতের বাস পাওয়া যায়। ঢাকার সদরঘাট থেকে স্বরূপকাঠি ও বরিশালের লঞ্চ পাওয়া যায়। স্বরূপকাঠি পৌঁছানোর পর রিকশা বা ইজি বাইকে করে সহজেই এই আটঘর কুরিয়ানা ভাসমান পেয়ারা বাজারে পৌঁছানো যায়। এছাড়াও আপনি পিরোজপুর জেলা সদর থেকে স্বরূপকাঠি উপজেলায় একটি বাসে যেতে পারেন, যেখান থেকে আপনি ইজিবাইক বা রিকশায় আটঘর কুরিয়ানা পৌঁছাতে পারেন।